Category Archives: ছেলেবেলা (Childhood)

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস

বেশ অনেক দিন হল আমার ব্লগ লিখা হচ্ছে না। প্রতিদিনই ভাবি আজ লিখব, সবকিছু লিখার জন্য প্রস্তুত করি কিন্তু আর লিখা হয় না।

আজ শুরু করেই দিলাম। মনে পরছে সেই ১৯৯৪~১৯৯৫ এর বিজয় দিবসের দিনগুলো। তখন পড়তাম প্রাইমারী স্কুলে (৩য় বা ৪র্থ ক্লাস হতে পারে)। প্রতিদিনের মত বাবা আজ আমাদের ঘুম থেকে উঠার তারা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার ছোট ভাই কে বাবা আদর করে “শুশুর” বলে ডকে বলে ঘুম থেকে উঠ না হলে তোমাকে কিন্তু রেখেই বড় বাবু (বাবা আমাকে ডাকত এই নামে) নিয়ে যাব।

যাইহোক আমারা দুই ভাই উঠে পরি। বাবার সাথে প্রথম (এর আগেও হতে পারে) স্টেডিয়াম এ যাওয়া। ও সে কি বিশাল মাঠ (এত ছোটতে) কত কত মানুষ, সবার হাতে লাল সবুজ পতাকা, আমার মত ছেলেমেয়েদের হাতে বেলুন, কারও হাতে লাল, গোলাপি হাওয়াই মিঠাই, বাঁশের বাঁশি (তখন প্লাস্টিক ছিলই না বলতে গেলে) আরও কত কিছু খেলনা।

মাইকে গান হচ্ছে “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না” (শিল্পিঃ সাবিনা ইয়াসমিন) আর অনেক অনেক স্কুল পোশাক পরা ছেলে মেয়েরা লাইন হয়ে দারিয়ে আছে। কেউ বা পিটি করছে তখন বলতাম লেফট-রাইট অনেকটা পুলিশ বা আর্মির মত।

বাবা আমাদের নিয়ে বসালেন স্টেডিয়াম এর গ্যলারীর মাঝামাঝি। আমার ছোট ভাই বেশি ছোট হওয়ায় কিছুক্ষন পর পর বলছে বাবা এইটা কি ওইটা কি? আমিও অবশ্য সবকিছু তখন চিনিনা, ভালই হচ্ছে আমারও জানা হচ্ছে। কিচ্ছুক্ষন পর দেখি এক লোক মাঠের মাঝখানে অনেকগুলো বেলুন নিয়ে আসছে প্রধান মঞ্চের (রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো চেয়ার আর ছোপা) দিকে।

কিছুক্ষন পর মাইক এ ঘোষণা করল জেলা প্রশাসক মহাদয় বিজয় দিবসের উদ্বোধন করবেন। তখনই দেখি বেলুনগুলো আকাশের দিকে উরে যাচ্ছে! একি বেলুন আকাশে উরে নাকি? ওইটাই ছিল আমার প্রথম গ্যাস বেলুন দেখা। সাথে এক ঝাক সাদা, কাল ও বিভিন্ন রঙের কবুতর উরে চলে গেল। এই হল মূল পর্বের শুরু।

ছেলেমেয়েরা লাইন ধরে মার্চ করতে করতে চলে গেল। কি সুন্দর সবাই এক সাথে হাত নাড়িয়ে পাচালিয়ে যাচ্ছে। এরপর সুরু হল অভিনয় এর পালা কেউ মুক্তিযোদ্ধা সেজে বা কেউ বীরাঙ্গনা সেজে, কেউ বা রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেজে কত কি যে অভিনয় করে দেখাল সেটা মনে করতে পারছিনা।

ছেলে মেয়েরা লাইন ধরে মার্চ করতে করতে চলেছে

এর বেশকিছু বছর পর আমাদের এলাকার ক্লাব থেকে প্রতিবছর আমরাও বিজয় দিবসে পিটি করে এবং ভাস্কর্য (চক পাওডার মেখে সাদা হয়ে যেতাম আমরা) সেজে অংশ গ্রহন করেছি। হায় সে সব দিন! ১৬ ডিসেম্বর এর আগে আমাদের পারার রাস্তায় আমরা পিটি করতাম আর পারার সবাই (ছোট থেকে বড়) আমাদের দেখত আর নিজেরা নিজেরা কথা বলত যাক আজ খেলাবাদ দিয়ে কাজের কাজ করছে।

বিভিন্ন ধরনের ডিসপ্লে বা অভিনয় এর নমুনা

আজ কত দিন হল আর বিজয় দিবস পালন করতে কোন মাঠে যাই না। জানি না কেমন হয় সব অনুষ্ঠান।

পরিশেষে শ্রদ্ধাভরে শরণ করছি সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের, সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সাহায্যকারী, বীরাঙ্গানা ও নাম না জান অসংখ্য মানুষদের যারা প্রান দিয়েছেন এই দেশের জন্য আমাদের এই স্বাধীনতার জন্য এবং অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

আহ! শৈশব … ছেলেবেলা … তারাই বুঝবে যারা এর সাথে সংযুক্ত ছিল

লিখতে বসলেই শুধু মনে হয় আজ এই লেখা টা শেষ করতে পারব না। কিন্তু আজ শেষ করেই ঘুমাব।

পুরাতন হাসপাতাল লেন, মাস্টারপাড়া, ব্রাইট স্টার ক্লাব, বাবলা কাকুদের মাঠ, বুলু কাকুদের মাঠ, হসপিটাল মাঠ, ফারুক কাকুদের ভূতুরে পুকুর গুলো, জিকজাগ রোড, পানির ট্যাঙ্ক, Girls School  এর নারিকেল গাছ আর সিভিল সার্জন এর বিশাল বাড়ি এই তো ছিল আমাদের শৈশব আর ছেলেবেলা।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে কুস্তী আর অপেক্ষা কখন মা ডাক দেবে রান্না ঘরে খাওয়ার জন্য। তারপর ইশকুলের জন্য অপেক্ষা, কখন বাজবে ৯টা ৩০। আমরা প্রায় এক সাথেই স্কুল এ যাওয়া হত, ষষ্ট ও সপ্তপ শ্রেণীতে থেকেই। স্কুল এর ক্লাস শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা আগেই যাওয়া তারপর ক্রিকেট খেলা এস্যাম্বিলি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। শুরু হল মোথাহার স্যার এর গগন ফাটানো লিড … “সামনে নজর বুক টান … ডান বাম ডান … ” কিরে তুই আজ জুতা পরে আসিস নাই কেন ??? কিরে এটা কার প্যান্ট? …

টিফিন নিয়ে কাড়াকাড়ি, তারপর বাসায় টিফিন খেতে আসা আমি, জুয়েল, রুমন, জেমিন আর মিথুন ভাই, রওনক ভাই , মুরাদ ভাই  … ওই আবার Girls School এর সামনে দিয়ে আসা যাওয়া … সেই প্রথম আমাদের পাড়ার তিন কন্যার সাথে Girls School এর দোতালায় থেকে রাস্তায় আমাদের সাথে মুখ ভ্যংচানো।

বিকেলে কিছুক্ষণ খেলা তারপর আবার জিগজাগ রাস্তার এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত পায়েচারি … কারণ আমাদের পাড়ার কন্যারা দাঁড়িয়ে থাকত । প্রতিদিনেই কিছু না কিছু মুখ ভ্যংচানো… এই ভাবেই চলছিল।

একবার হরতালের জন্য ১ মাস না ২ মাস স্কুল বন্ধ। তখন হল খেলা শুরু। রাসেদ ভাই, ইভান ভাই, পামেল ভাই, রকছী ভাই, রওনক ভাই, মূড়াড ভাই, পুলূক ভাই, রাজীব ভাই, মিথুন ভাই, জনি ভাই আর আমরা নয় জন । লিমন জেমিন এর সে কি মজার ঝগড়া … অবশ্য আমার মনে হইত সব কিছুই ছিল রুমন আর জুয়েলের মজার প্লান।

ছোটদের দেখতাম আমাদের সবাইকে অনেক ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে। তার মাঝে ছিল দিশা আর নিলয় ভাল পর্যবেক্ষণকারী। এদের ও বস ছিল শশী।

স্বর্ণ ছিল এদের সবার থেকে আলাদা সব কিছুই দেখত আর বুঝে চুপ করে থাকত। আমি আর জুয়েল যেখানে গল্পের বই আর নিয়ে ব্যস্ত তথন সবাই হঠাত বড় হয়ে গেলাম। সবাই জানি কেমন হয়ে গেলাম।

কত না মজার স্মৃতি মনে আসছে আজ কিন্তু কিছুই লিখতে পারছি না ।। শুধু মনে হয় … বন্ধুকে আমি ভুল বুজেছি। সারা জীবন। মনে হলে আবার হয়ত এই লিখা আবার সংশোধন করব। বই পরি নাতো তাই এই অবস্তা।